বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

কবিতা

ছবি
Facebook.com/gorabasunia এ পৃথিবীর বুকে তুমি প্রস্ফুটিত সব চেয়ে সুন্দর তম ফুল, শুধু তোমা কেই দেখার জন্যে আমার হৃদয় হয় আকুল, তোমাকে সুন্দর লাগে তাই দেখি সেকি মোর কোন ভুল ? তোমার জন্যে কেঁদে কেঁদে মরে আমার পরাণ বুলবুল। শিশিরে ভেজা পাপড়ির মত ঠোট মেঘের মত নরম চুল, ফুলের চেয়েও রূপসী যে তুমি হরিণ নয়ন তোমার অতুল । তোমার রুপের আসক্তিতে ভাসে আমার হৃদয়ের দু কূল, তুমি সব চেয়ে সুবাসিত বিনোদিনী আমার বাগিচার ফুল ।

ভুল প্রেমে কেটে গেছে তিরিশ টি বসন্ত

তসলিমা নাসরিন এক অপ্রেমিকের জন্যে এই শহরেই তুমি বাস করবে, কাজে অকাজে দৌড়োবে এদিক ওদিক কোথাও আড্ডা দেবে অবসরে, মদ খাবে, তুমুল হৈ চৈ করবে, রাত ঘুমিয়ে যাবে, তুমি ঘুমোবে না। ফাঁক পেলে কোনও কোনও সন্ধেয় এ বাড়ি ও বাড়ি খেতে যাবে, খেলতে যাবে, কে জানে হয়তো খুলতেই যাবে আলগোছে কারও শাড়ি আমার আঙিনা পেরিয়েই কোনও বাড়িতেই হয়তো। এ পাড়াতেই হয়তো দু’বেলা হাঁটাহাঁটি করবে, হাতের নাগালেই থাকবে, হয়তো কখনও জানিয়েও দেবে আমাকে, যে, কাছেই আছো, কুঁকড়ে যেতে থাকবো, কুচি কুচি করে নিজেকে কাটতে থাকবো দেখা না হওয়ার যণ্ত্রণায়, তবু বলবো না, এসো। বলবো না, তোমাকে সুযোগ দেব না বলার যে তোমার সময় নেই, বা ভীষণ ব্যস্ত তুমি ইদানিং তোমার অপ্রেম থেকে নিজেকে বাঁচাবো আমি। তোমার সঙ্গে আমার দেখা হবে না। বছর পেরোবে, তোমার সঙ্গে দেখা হবে না আমার, দেখা না হতে না হতে ভুলতে থাকবো তোমার সঙ্গে দেখা হওয়াটা ঠিক কেমন ছিল কী রঙের সার্ট পরতে তুমি, হাসলে তোমাকে ঠিক কেমন দেখাতো, কথা বলার সময় নখ খুঁটতে, চোখের দিকে নাকি অন্য কোথাও তাকাতে, পা নাড়তে, ঘন ঘন চেয়ার ছেড়ে উঠতে, জল খেতে কিনা, ভুলতে থাকবো। দেখা না হতে না হতে ভুলতে থাকবো তুমি ঠিক দেখতে কেমন ছিলে, তিলগুলো মুখের ঠিক কোথায় কোথায় ছিল, অথবা আদৌ ছিল কিনা। তোমার চুমু খাওয়াগুলো ঠিক কেমন, জড়িয়ে পেঁচিয়ে চুলে বা বুকে মুখ গোঁজাগুলো ঠিক কেমন, ভুলতে থাকবো। অনেকগুলো বছর পেরিয়ে যাবে, তোমার সঙ্গে আমার আর দেখা হবে না। এক শহরেই, অথচ দেখা হবে না। পথ ভুলেও কেউ কারও পথের দিকে হাঁটবো না, আমাদের অসুখ বিসুখ হবে, দেখা হবে না। কোনও রাস্তার মোড়ে কিংবা পেট্রোল পাম্পে কিংবা মাছের দোকানে, বইমেলায়, রেস্তোরাঁয়, কোথাও দেখা হবে না। আরও অনেকগুলো বছর পর, ভেবে রেখেছি, যেদিন হুড়মুড় করে এক ঝাঁক আলো নিয়ে সন্ধে ঢুকতে থাকবে আমার নির্জন ঘরে, যেদিন বারান্দায় দাঁড়ালে আমার আঁচল উড়িয়ে নিতে থাকবে বুনো বৈশাখি এক আকাশ চাঁদের সঙ্গে কথা বলবো যে রাতে সারারাত-\-\ তোমাকে মনে মনে বলবোই সেদিন, কী এমন হয় দেখা না হলে, দেখা না হলে মনে হতো বুঝি বেঁচে থাকা যায় না, কে বলেছে যায় না, দেখ, দিব্যি যায়! তোমার সঙ্গে দেখা হয়নি কয়েক হাজার বছর, তাই বলে কি আর বেঁচে ছিলাম না? দিব্যি ছিলাম! ভেবেছি বলবো, তুমি তো আসলে একটা কিছুই-না ধরনের কিছু, আমার আকাংখা দিয়ে এঁকেছিলাম তোমাকে, আমার আকাংখা দিয়ে তোমাকে প্রেমিক করেছিলাম, আমার আকাংখা দিয়ে তোমাকে অপ্রেমিকও করেছি তোমাকে না দেখে লক্ষ বছরও বেঁচে থাকতে পারি! অপ্রেমিককে না ছুঁয়ে, অনন্তকাল। এক ফোঁটা চোখের জল বর্ষার জলের মতো ঝরে ধুয়ে দিতে পারে এতকালের আঁকা সবগুলো ছবি, তোমার নাম ধাম দ্রুত মুছে দিতে পারে চোখের জল। তোমাকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে। আমাকে একা বলে ভেবো না কখনো, তোমার অপ্রেম আমার সঙ্গে সঙ্গে থাকে। সময় রাত তিনটেয় ঘুম ভেঙে গেলে এখন আর বিরক্ত হই না রাতে ভালো ঘুম না হলে দিনটা ভাল কাটে না – এমান বলে লোকে । দিন যদি ভাল না কাটে তাহলে কি কিছু যায় আসে ! আমার দিনই বা কেন , রাতই বা কেন ? দিন দিনের মতো বসে থাকে দূরে , আর রাত রাতের মতো , ঘুমিয়ে থাকার গায়ে মুখ গুঁজে গুঁটি গুঁটি শুয়ে থাকে জেগে থাকা । এসব দিন রাত , এসব সময় , এসব বিয়ে আমার করার কিছুই নেই , জীবন আর মৃত্যু একাকার হয়ে গেলে কিছু আর করার থাকে না কিছু না । আমি এখন মৃত্যু থেকে জীবনকে বলে কয়েও সরাতে পারি না , জীবন থেকে মৃত্যুকে আলগোছে তুলে নিয়ে রাখতে পারি না কোথাও আপাতত । হাত আবার আমি তোমার হাতে রাখবো বলে হাত গুছিয়ে নিয়ে জীবনখানি উজান ডিঙি বেয়ে এসেছি সেই উঠোনটিতে গভীর করে রাত দেখছ না কি চাঁদের নীচে দাঁড়িয়ে কাঁদি দুঃখবতী মেয়ে ! আঙুলগুলো কাঁপছে দেখ, হাত বাড়াবেকখন ? কুয়াশা ভিজে শরীরখানা পাথর হয়ে গেলে ? হাত ছাড়িয়ে নিয়েছিলাম বর্ষা ছিল তখন, তখন তুমি ছিঁড়ে খেতে আস্ত কোনও নারী নাগাল পেলে। শীতের ভারে ন্যুব্জ বাহু স্পর্শ করে দেখি ভালবাসার মন মরেছে, শরীর জবুথবু, যেদিকে যাই, সেদিকে এত ভীষণ লাগে মেকি। এখনও তুমি তেমন আছ। বয়স গেল, বছর গেল, তবু। নিজের কাঁধে নিজের হাত নিজেই রেখে বলি : এসেছিলাম পাশের বাড়ি, এবার তবে চলি। ভুল প্রেমে কেটে গেছে তিরিশ বসন্ত ভুল প্রেমে কেটে গেছে তিরিশ বসন্ত, তবু এখনো কেমন যেন হৃদয় টাটায়- প্রতারক পুরুষেরা এখনো আঙুল ছুঁলে পাথর শরীর বয়ে ঝরনার জল ঝরে। এখনো কেমন যেন কল কল শব্দ শুনি নির্জন বৈশাখে, মাঘ-চৈত্রে- ভুল প্রেমে কেটে গেছে তিরিশ বসন্ত, তবু বিশ্বাসের রোদে পুড়ে নিজেকে অঙ্গার করি। প্রতারক পুরুষেরা একবার ডাকলেই ভুলে যাই পেছনের সজল ভৈরবী ভুলে যাই মেঘলা আকাশ, না-ফুরানো দীর্ঘ রাত। একবার ডাকলেই সব ভুলে পা বাড়াই নতুন ভুলের দিকে একবার ভালোবাসলেই সব ভুলে কেঁদে উঠি অমল বালিকা। ভুল প্রেমে তিরিশ বছর গেল সহস্র বছর যাবে আরো, তবু বোধ হবে না নির্বোধ বালিকার। অভিমান কাছে যতটুকু পেরেছি আসতে, জেনো দূরে যেতে আমি তারো চেয়ে বেশী পারি। ভালোবাসা আমি যতটা নিয়েছি লুফে তারো চেয়ে পারি গোগ্রাসে নিতে ভালোবাসা হীনতাও। জন্মের দায়, প্রতিভার পাপ নিয়ে নিত্য নিয়ত পাথর সরিয়ে হাঁটি। অতল নিষেধে ডুবতে ডুবতে ভাসি, আমার কে আছে একা আমি ছাড়া আর ? পাখি হয়েও ফিরব একদিন আমার জন্য অপেক্ষা করো মধুপুর নেত্রকোনা অপেক্ষা করো জয়দেবপুরের চৌরাস্তা আমি ফিরব। ফিরব ভিড়ে হট্টগোল, খরায় বন্যায় অপেক্ষা করো চৌচালা ঘর, উঠোন, লেবুতলা, গোল্লাছুটের মাঠ আমি ফিরব। পূর্ণিমায় গান গাইতে, দোলনায় দুলতে, ছিপ ফেলতে বাঁশবনের পুকুরে- অপেক্ষা করো আফজাল হোসেন, খায়রুননেসা, অপেক্ষা করো ঈদুল আরা, আমি ফিরব। ফিরব ভালবাসতে, হাসতে, জীবনের সুতোয় আবার স্বপ্ন গাঁথতে- অপেক্ষা করো মতিঝিল, শান্তিনগর, অপেক্ষা করো ফেব্রুয়ারি বইমেলা আমি ফিরব। মেঘ উড়ে যাচ্ছে পশ্চিম থেকে পুবে, তাকে কফোটা জল দিয়ে দিচ্ছি চোখের, যেন গোলপুকুর পাড়ের বাড়ির টিনের চালে বৃষ্টি হয়ে ঝরে। শীতের পাখিরা যাচ্ছে পশ্চিম থেকে পুবে, ওরা একটি করে পালক ফেলে আসবে শাপলা পুকুরে, শীতলক্ষায়, বঙ্গোপসাগরে। ব্রহ্মপুত্র শোনো, আমি ফিরব। শোনো শালবন বিহার, মহাস্থানগড়, সীতাকু- পাহাড়-আমি ফিরব। যদি মানুষ হয়ে না পারি, পাখি হয়েওফিরব একদিন। চিঠি প্রিয় রুদ্র, প্রযত্নে, আকাশ তুমি আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখতে বলেছিলে। তুমি কি এখন আকাশ জুরে থাকো? তুমি আকাশে উড়ে বেড়াও? তুলোর মতো, পাখির মতো? তুমি এই জগত্সংসার ছেড়ে আকাশে চলে গেছো। তুমি আসলে বেঁচেই গেছো রুদ্র। আচ্ছা, তোমার কি পাখি হয়ে উড়ে ফিরে আসতে ইচ্ছে করে না? তোমার সেই ইন্দিরা রোডের বাড়িতে, আবার সেই নীলক্ষেত, শাহবাগ, পরীবাগ, লালবাগ চষে বেড়াতে? ইচ্ছে তোমার হয় না এ আমি বিশ্বাস করি না, ইচ্ছে ঠিকই হয়, পারো না। অথচ এক সময় যা ইচ্ছে হতো তোমার তাই করতে। ইচ্ছে যদি হতো সারারাত না ঘুমিয়ে গল্প করতে – করতে। ইচ্ছে যদি হতো সারাদিন পথে পথে হাটতে –হাটতে। কে তোমাকে বাধা দিতো? জীবন তোমার হাতের মুঠোয় ছিলো। এইজীবন নিয়ে যেমন ইচ্ছে খেলেছো। আমার ভেবে অবাক লাগে, জীবন এখন তোমার হাতের মুঠোয় নেই। ওরা তোমাকে ট্রাকে উঠিয়ে মিঠেখালি রেখে এলো, তুমি প্রতিবাদ করতে পারোনি। আচ্ছা, তোমার লালবাগের সেই প্রেমিকাটির খবর কি, দীর্ঘ বছর প্রেম করেছিলে তোমার যে নেলী খালার সাথে? তার উদ্দেশ্যে তোমার দিস্তা দিস্তা প্রেমের কবিতা দেখে আমি কি ভীষণ কেঁদেছিলাম একদিন ! তুমি আর কারোসঙ্গে প্রেম করছো, এ আমার সইতো না। কি অবুঝ বালিকা ছিলাম ! তাই কি? যেন আমাকেই তোমার ভালোবাসতে হবে। যেন আমরা দু’জন জন্মেছি দু’জনের জন্য। যেদিন ট্রাকে করে তোমাকে নিয়ে গেলো বাড়ি থেকে, আমার খুব দম বন্ধ লাগছিলো। ঢাকা শহরটিকে এতো ফাঁকা আর কখনো লাগেনি। বুকের মধ্যে আমার এতো হাহাকারও আর কখনো জমেনি। আমি ঢাকা ছেড়ে সেদিন চলে গিয়েছিলাম ময়মনসিংহে। আমার ঘরে তোমার বাক্সভর্তি চিঠিগুলো হাতে নিয়ে জন্মের কান্না কেঁদেছিলাম। আমাদের বিচ্ছেদ ছিলো চার বছরের। এতো বছর পরও তুমি কী গভীর করে বুকের মধ্যে রয়ে গিয়েছিলে ! সেদিন আমি টের পেয়েছি। আমার বড়ো হাসি পায় দেখে, এখন তোমার শ’য়ে শ’য়ে বন্ধু বেরোচ্ছে। তারা তখন কোথায় ছিলো? যখন পয়সার অভাবে তুমি একটি সিঙ্গারা খেয়ে দুপুর কাটিয়েছো। আমি না হয় তোমারবন্ধু নই, তোমাকে ছেড়ে চলে এসেছিলাম বলে। এই যে এখন তোমার নামে মেলা হয়, তোমার চেনা এক আমিইবোধ হয় অনুপস্থিত থাকি মেলায়। যারা এখন রুদ্র রুদ্র বলে মাতম করে বুঝিনা তারা তখন কোথায় ছিলো? শেষদিকে তুমি শিমুল নামের এক মেয়েকে ভালোবাসতে। বিয়ের কথাও হচ্ছিলো। আমাকে শিমুলের সব গল্প একদিন করলে। শুনে … তুমি বোঝোনিআমার খুব কষ্ট হচ্ছিলো। এই ভেবে যে, তুমি কি অনায়াসে প্রেম করছো !তার গল্প শোনাচ্ছো ! ঠিক এইরকম অনুভব একসময় আমার জন্য ছিলো তোমার ! আজ আরেকজনের জন্য তোমার অস্থিরতা। নির্ঘুম রাত কাটাবার গল্প শুনে আমার কান্না পায় না বলো? তুমি শিমুলকে নিয়ে কি কি কবিতা লিখলে তা দিব্যি বলে গেলে! আমাকে আবার জিজ্ঞেসও করলে, কেমন হয়েছে। আমি বললাম, খুব ভালো। শিমুল মেয়েটিকে আমি কোনোদিন দেখিনি, তুমি তাকে ভালোবাসো, যখন নিজেই বললে, তখন আমার কষ্টটাকে বুঝতে দেইনি। তোমাকে ছেড়ে চলে গেছি ঠিকই কিন্তু আর কাউকে ভালোবাসতে পারিনি। ভালোবাসা যে যাকে তাকে বিলোবার জিনিস নয়। আকাশের সঙ্গে কতো কথা হয় রোজ ! কষ্টের কথা, সুখের কথা। একদিন আকাশভরা জোত্স্নায় গা ভেসে যাচ্ছিলো আমাদের। তুমি দু চারটি কষ্টের কথা বলে নিজের লেখা একটি গান শুনিয়েছিলে। “ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি দিও”।মংলায় বসে গানটি লিখেছিলে। মনে মনে তুমি কার চিঠি চেয়েছিলে? আমার? নেলী খালার? শিমুলের? অনেক দিন ইচ্ছে তোমাকে একটা চিঠিলিখি। একটা সময় ছিলো তোমাকে প্রতিদিন চিঠি লিখতাম। তুমিও লিখতে প্রতিদিন। সেবার আরমানিটোলার বাড়িতে বসে দিলে আকাশের ঠিকানা। তুমি পাবে তো এই চিঠি? জীবন এবং জগতের তৃষ্ণা তো মানুষের কখনো মেটে না, তবু মানুষ আর বাঁচে ক’দিন বলো? দিন তো ফুরোয়। আমার কি দিন ফুরোচ্ছে না?তুমি ভালো থেকো। আমি ভালো নেই। ইতি, সকাল পুনশ্চঃ আমাকে সকাল বলে ডাকতে তুমি। কতোকাল ঐ ডাক শুনি না। তুমি কি আকাশ থেকে সকাল, আমার সকাল বলে মাঝে মধ্যে ডাকো? নাকি আমি ভুল শুনি?

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভালবাসার কবিতা

নষ্ট হবে

এত হাসি কোথায় পেলে