বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

কবিতা

ছবি
Facebook.com/gorabasunia এ পৃথিবীর বুকে তুমি প্রস্ফুটিত সব চেয়ে সুন্দর তম ফুল, শুধু তোমা কেই দেখার জন্যে আমার হৃদয় হয় আকুল, তোমাকে সুন্দর লাগে তাই দেখি সেকি মোর কোন ভুল ? তোমার জন্যে কেঁদে কেঁদে মরে আমার পরাণ বুলবুল। শিশিরে ভেজা পাপড়ির মত ঠোট মেঘের মত নরম চুল, ফুলের চেয়েও রূপসী যে তুমি হরিণ নয়ন তোমার অতুল । তোমার রুপের আসক্তিতে ভাসে আমার হৃদয়ের দু কূল, তুমি সব চেয়ে সুবাসিত বিনোদিনী আমার বাগিচার ফুল ।

তুমি চলে যাবে

মহাদেব সাহা তুমি চলে যাবে বলতেই তোমাকে আরেকটু বসতে বললেই তুমি যখন মাথা নেড়ে না, না বলো সঙ্গে সঙ্গে সব মাধবীলতার ঝোপ ভেঙে পড়ে;... তুমি চলে যাওয়ার জন্যে যখন সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকো তৎক্ষণাৎ পৃথিবীর আরো কিছু বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যায়, তুমি উঠোন পেরুলে আমি কেবল শূন্যতা শূন্যতা ছাড়া আর কিছুই দেখি না আমার প্রিয় গ্রন্থগুলির সব পৃষ্ঠা কালো কালিতে ঢেকে যায়। অথচ চোখের আড়াল অর্থ কতোটুকু যাওয়া, কতোদূর যাওয়া- হয়তো নীলক্ষেত থেক বনানী, ঢাকা থেকে ফ্রাঙ্কফুর্ট তবু তুমি চলে যাবে বলতেই বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে ওঠে সেই থেকে অবিরাম কেবল পাড় ভাঙার শব্দ শুনি পাতা ঝরার শব্দ শুনি- আর কিছুই শুনি না। তোমার টেলিফোন এক লক্ষ আশি হাজার বছর আমি তোমার টেলিফোনের আশায় বসে আছি না, তোমার ডায়াল ঘুরলো না আমার দিকে ; পৃথিবীর সব ঘঁড়ির কাঁটা কতো লক্ষবার উত্তর মেরু দক্ষিন মেরু ঘুরে এলো আমেরিকা আবিষ্কার করে, তবু একবার সিক্স ডিজিট সাঁকো অতিক্রম করতে পারলে না তুমি । তোমার একটি টেলিফোনের অপেক্ষায় আকাশের সব তারা গুনে শেষ করলাম শেলফের একটা বই কতোবার হাতে উঠলো আমার, তবু তুমি একবার ঘুরাতে পারলেনা তোমার টেলিফোন । কিন্তু এর মধ্যে কতো অসংখ্যবার ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিলো ব্রজেন দাস, তুমি এই সামান্য দূরত্বটুকু অতিক্রম করতে পারলেনা । তুমি যখনই টেলিফোন তোলো তখনই নাকি পৃথিবীর সব টেলিফোন লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এক লক্ষ বছরেও কখনোই নাকি ডায়ালটোন পেলে না তুমি, অথচ পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যস্ততম নগরীর রাজপথেও এর মধ্যে কতো লক্ষ যানজট খুলে গেলো । তোমার একটি টেলিফোনের জন্যে কতো সহস্রবার জরুরী বার্তা পাঠালাম নিসর্গলোকে টিএন্ডটির অভিযোগ খাতার সব পৃষ্ঠা ভরে গেলো না, তারপরও তোমার ডায়াল ঘুরলো না, তোমার স্বর্গীয় টেলিফোন আর কবে পাবো ! তোমাকে কোথায় রাখি তোমাকে রাখবো আমি কোনখানে এই অবেলায় যা ছিলো আমার সব বর্ষার বৃষ্টিতে ভিজে যায় ; তোমাকে কোথায় রাখি অবেলায় ফোটা পদ্মফুল আমার কিছুই নাই শূন্যহাত বিষণ্ণ ব্যাকুল ; তোমাকে কোথায় রাখি, তোমাকে কোথায় বলো রাখি এমন সাধ্যও নাই তোমাকে দুয়ার খুলে ডাকি ; তোমাকে রাখবো আমি কোনখানে এই অবেলায় আমার যা ছিলো সব বর্ষায় বৃষ্টিতে ভিজে যায় । আমার কবিতার জন্যে আমি কবিতা লিখবো বলে এই আকাশ পরেছে নক্ষত্রমালা, পরেছে রঙধনু-পাড় শাড়ি, অপরূপ চন্দ্রহার নদীর গহনা পরে আছে গ্রামগুলি, শুধু আমি কবিতা লিখবো তাই এই প্রকৃতি পরেছে পুষ্পশোভা, কানে পরেছে ফুলের দুল, হাতে ঝিনুকের চুড়ি। মন হুহু-করা এমন উদাস বাতাস, এমন স্নিগ্ধ বৃষ্টিধারা এই ঝর্নার মুখর গান, ফুলের সৌরভ কেবল আমার কবিতার মধ্যে, আমি কবিতা লিখবো তাই। আমি কবিতা লিখবো বলে ঘাসে এমন শিশির মুক্তো গাছের পাতায় এই ঘন সবুজ রঙ- রাজহাঁসগুলির এমন আলতা-পরা পা, শাদা বকের পাখার মতে এই নদীর জল ফাল্গুনে এমন অগ্নিবর্ণ পলাশ-শিমুল; আমি কবিতা লিখবো বলে মাছের দুচোখ এমন রহস্যময়, জলের শুভ্রতা এমন হৃদয়গ্রাহী। আমি কবিতা লিখবো তাই শূন্যতার নাম আকাশ জলের বিস্তারের নাম সমুদ্র, গাছপালা, জঙ্গলের নাম অরণ্য জলরেখার ভালো নাম নদী; আমি কবিতা লিখবো বলে এই আকাশ ও প্রকৃতি জুড়ে এতো সাজসজ্জা, এতো আয়োজন, চিরবসন্তোৎসব। তোমাকে লিখবো বলে একখানি চিঠি তোমাকে লিখবো বলে একখানি চিঠি কতোবার দ্বারস্ত হয়েছি আমি গীতিকবিতার, কতোদিন মুখস্ত করেছি এই নদীর কল্লোল কান পেতে শুনেছি ঝর্ণার গান, বনে বনে ঘুরে আহরণ করেছি পাখির শিস্ উদ্ভিদের কাছে নিয়েছি শব্দের পাঠ; তোমাকে লিখবো বলে একখানি চিঠি সংগ্রহ করেছি আমি ভোরের শিশির, তোমাকে লেখার মতো প্রাঞ্জল ভাষার জন্য সবুজ বৃক্ষের কাছে জোড়হাতে দাঁড়িয়েছি আমি- ঘুরে ঘুরে গুহাগাত্র থেকে নিবিড় উদ্ধৃতি সব করেছি চয়ন; তোমাকে লিখবো বলে জীবনের গূঢ়তম চিঠি হাজার বছর দেখো কেমন রেখেছি খুলে বুক। আমার জীবন আমার জীবন আমি ছড়াতে ছড়াতে এসেছি এখানে, আমি কিছুই রাখিনি- কুড়াইনি তার একটিও ছেঁড়া পাতা, হাওয়ায় হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়েছি শিমুল তুলোর মতো সব সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, স্মৃতি, আমি এই হারানো জীবন আর খুজি নাই সেই ফেলে আসা পথে; ছেঁড়া কাগজের মতো ছড়াতে ছড়াতে এসেছি আমাকে। পথে পড়ে থাকা ছিন্ন পাপড়ির মতো হয়তো এখানো পড়ে আছে আমার হাসি ও অশ্রু, পড়ে আছে খেয়ালি রুমাল, পড়ে আছে দুই এক ফোঁটা শীতের শিশির; এখনো হয়তো শুকায়নি কোনো কোনো অশ্রুবিন্দুকণা, বৃষ্টির ফোঁটা চঞ্চল করুণ দৃষ্টি, পিছু ডাক, হয়তো এখনো আছে সকালের মেঘভাঙা রোদে, গাছের ছায়ায় পদ্মাপকুরের স্থির কালো জলে, হয়তো এখনো আছে হাঁসের নরম পায়ে গচ্ছিত আমার সেই হারানো জীবন সেই সুখ-দুঃখ গোপন চোখের জল। এখনো হয়তো পাওয়া যাবে মাটিতে পায়ের চিহ্ন সেসব কিছুই রাখিনি আমি ফেলতে ফেলতে ছড়াতে ছড়াতে এখানে এসেছি; আমি এই জীবনকে ফ্রেমে বেঁধে রাখিনি কখনো নিখুঁত ছবির মতো তাকে আগলে রাখা হয়নি আমার, আমার জীবন আমি এভাবে ছড়াতে ছড়াতে এসেছি। আমার সঞ্চয় আজ কেবল কুয়াশা, কেবল ধূসর মেঘ কেবল শূন্যতা আমি এই আমাকে ফ্রেমে বেঁধে সাজিয়ে রাখিনি, ফুটতে ফুটতে ঝরতে ঝরতে আমি এই এখানে এসেছি; আমি তাই অম্লান অক্ষুণ্ন নেই, আমি ভাঙাচোরা আমি ঝরা-পড়া, ঝরতে ঝরতে পড়তে পড়তে এতোটা দীর্ঘ পথ এভাবে এসেছি আমি কিছুই রাখিনি ধরে কোনো মালা, কোনো ফুল, কোনো অমলিন স্মৃতিচিহ্ন কতো প্রিয় ফুল, কতো প্রিয় সঙ্গ, কতো উদাসীন উদ্দাম দিন ও রাত্রি সব মিলে হয়ে গেছে একটিই ভালোবাসার মুখ, অজস্র স্মৃতির ফুল হয়ে গেছে একটিই স্মৃতির গোলাপ সব সাম মিলে হয়ে গেছে একটিই প্রিয়তম নাম; আমার জীবন আমি ফেলতে ফেলতে ছড়াতে ছড়াতে এখানে এসেছি।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভালবাসার কবিতা

নষ্ট হবে

এত হাসি কোথায় পেলে