পাবলো নেরুদা
হাঁটছি
প্রায়শ এমন হয়-নিজেকে মানুষ ভাবলে বমনেচ্ছা হয়
হেঁটে যাই দর্জির দোকান আর সিনেমাহলের ভিতর দিয়ে
শুকিয়ে ওঠা, জলনিরোধক, পশমী কাপড়ের তৈরি একটি রাজহাঁস
নিয়ন্ত্রণ করছে আমার পথ ছাই আর জরায়ূর জলে।
নাপিতের দোকানের গন্ধ আমাকে ঠেলে দেয় ঘোড়ার কান্নার ভিতরে
আমি কেবল পাথর কি পশমের মতন স্থির শুয়ে থাকতে চাই
আর আমি দোকান আর আমি বাগান দেখতেচাই না
দেখতে চাই না পন্য, চশমা, লিফট।
প্রায়শ এমন হয়- আমার পা ও নখের ওপর ঘেন্না ধরে যায়
আর আমার চুল আর আমার ছায়ায় বমনেচ্ছা হয় ।
প্রায়শ এমন হয়-নিজেকে মানুষ ভাবলে বমনেচ্ছা হয়।
এখনও বিষয়টি চমৎকার হতে পারে
সুন্দর লিলি ফুল দিয়ে একজন আইনেরকেরানিকে ভয় দেখানো
অথবা কানে আঘাত করে সন্ন্যাসিনীকে খুন করা
বেশ হয়
সবুজ চাকু নিয়ে হেঁটে গেলে রাস্তায়
ঠান্ডায় মরার আগে তারস্বরে চিৎকার করলে।
অন্ধকারে শিকড় হতে আমি চাইনা
অনিশ্চিত, ছড়ানো, ঘুমের সঙ্গে শিউরানো
নীচে নেমে যাওয়া, একেবারে পৃথিবীর ভেজা-ভেজা নাড়িভুঁড়িতে
ভিতরে নিতে নিতে ভাবা, প্রতিদিন খাওয়া।
আমি এত দুঃখযাতনা চাইনা।
সমাধি ও শিকড়ের মতো আমি হয়ে যেতেচাই না,
ভূতলের নীচে একা, গুদাম ভর্তি মৃতদেহ,
অর্ধ-দিগন্ত, ক্ষোভে মরে যাওয়া।
এই জন্যই সোমবার, যখন আমায় আসতে দেখে
আমার দন্ডিত মুখ, গ্যাসোলিনের মতো জ্বলন্ত,
আর আহত চাকার মতো চিৎকার করছে পথে
আর রাত্রির অভিমুখে ছেড়ে যায় উষ্ণ রক্তভর্তি ট্রাক ।
আর আমায় ঠেলছে বিশেষ কোণে, আর্দ্র ঘরে
হাসপাতালে- যেখানে হাড় উড়ে যায় জানালায়,
ভিনেগারের গন্ধওয়ালা জুতার দোকানে,
আর চামড়ায় অতি কুৎসিত দাগ লাগা বিশেষ রাস্তায়।
ওখানে বাড়ি দরজায় ঝুলে আছে
সালফার-রঙা পাখি, আর কদাকার অন্ত্র -যা আমি ঘৃনা করি,
আর, কফিপটে ভুলে ফেলে রাখা কৃত্রিম দাঁত,
আয়না
লজ্জ্বায় আতঙ্কে কাঁদা উচিত
সবখানে ছাতা, সর্পবিষ, আর জন্মের নাড়ি।
একা ঘুরছি সমাহিত ভঙ্গিতে, আমার চোখ, আমার জুতা
আমার ক্রোধ, সবই ভুলে যাচ্ছি,
হাঁটছি, অফিস ভবনের ভিতর দিয়ে অর্থোপেডিক দোকান,
এবং চত্তরে লাইন ধরে কাপড় শুকোতেদিয়েছে,
অর্ন্তবাস, তোয়ালে আর শার্ট থেকেধীরে ময়লা
কান্না ঝরছে।
প্রশ্নের বই থেকে ৩
বলো আমাকে গোলাপ কি নগ্ন
নাকি নগ্নতাই তার পোশাক ?
কেন গাছেরা লুকায়
মুলে মুলে দীপ্ত প্রভা ?
কে শোনে হতাশার বাণী
চোরের মত ছুটে চলা অটোমোবাইলের ?
এর চেয়ে দু:খের কি কিছু দেখছ এ জগতে
বৃষ্টিতে ভিজতে থাকা রেল গাড়ি ?
আর কিছু নয়
সত্যের সাথে আমার চুক্তি
এ পৃথিবীর জন্যে সঞ্চয় করবো আলো
আমি যা চাই তা হলো রুটি
সংগ্রাম কোনো দিনই অভাব অনুভব করবে না আমার
অথচ এখানে যাকিছু ভালোবাসি সবই পেয়েছি
যা হারিয়েছি তা হলো নির্জনতা।
এখন আমি আর ওই পাথরের ছায়ায় বিশ্রাম নিই না
সমুদ্র কাজ করে চলেছে
নিঃশব্দে কাজ করে চলেছে আমার সত্বায়।
জীবন click to collapse contents
মাঝে মাঝে যখন তোমার কথা ভাবি
কি যে খারাপ লাগে!
যেহেতু তুমি জানো না
আমার সঙ্গে রয়েছে অগণন বিজয়ী মানুষের মুখ
যা তুমি দেখতে পাও না,
আমার সঙ্গে এগিয়ে চলেছে অগণন পা আর হৃদয়,
তাই আমি একা নই
একা হিসেবে নিজের কোনো অস্তিত্বই নেই,
আমি কেবল রয়েছি যারা আমার সঙ্গে চলেছে তাদের পুরোভাগে,
তাই আমি দুর্বল নই
কেননা আমি কেবল আমার ছোট্ট জীবনটাকেই বহন করে নিয়ে চলিনি
চলেছি সমস্ত মানুষের হৃদয়কে বহন করে
এবং এগিয়ে চলেছি দৃঢ় পায়ে
কেননা আমার যে হাজারো চোখে,
নিমেষে চূর্ণ করে ফেলি ভয়ঙ্কর সবপাথর
কেননা আমার যে হাজারো হাত,
তাই আমার কন্ঠস্বর
প্রতিটা দেশের সমুদ্রতীর থেকেও শোনা যায়
কেননা এ কন্ঠস্বর
যারা কখনও কথা বলেনি তাদের,
যারা কখনও গান গায়নি তাদের,
আর আজ যারা গান গাইছে
চুম্বনে তারা তোমাকে স্পর্শ করছে।
আমার কাছ থেকে দূরে থেকো না
আমার কাছ থেকে দূরে থেকো না, দয়া করো
একটা দিন অনেক অনেক দীর্ঘ সময়,
অনেক দূরে ঘুমে থাকা ট্রেনের আশায়
নীরব ইস্টিশানের জন্যে, আমার জন্যে।
একদন্ড আমায় ছেড়ে যেয়ো না, কারণ-
ভয়ের শীতল স্রোত ঘিরে ফেলে আমায়,
অথবা ঘর খোঁজা ধোঁয়া এসে চেপে বসে
বুকের উপরে, গলা টিপে ধরে আমার।
হারিওনা তুমি ছায়া হয়ে সমুদ্র তীরে;
তোমার চোখের পাতায় হারিওনা দূরে।
এক মুহূর্ত আমার ছেড়ে থেকোনা প্রিয়,
এক মুহুর্তে তুমি খুব দূরে চলে যাবে
আমি উদ্ভ্রান্ত ভেবে যাব, তুমি আসবে?
নাকি আমি আমৃত্যু রয়ে যাব একা?
যদি আমায় তুমি ভুলে যাও
একটি কথা আমি তোমাকে
জানিয়ে দিতে চাই ।
তুমি কি জান
আমি যখন আমার জানালার বাইরে
মন্থর হেমন্তের লাল ডালে
স্ফটিক চাঁদটির দিকে তাকাই,
যদি ছুঁয়ে দিই
আগুনের কাছটিতে
অবোধগম্য কিছু ছাই
কিংবা কাটা গুঁড়ির বৃত্তাকার শরীর-
এসবই তোমার নিকটে আমায় বহন করে নিয়ে যায়,
যেনবা- যা কিছু অস্তিত্বশীল,
সুগন্ধ, আলো, কিংবা ধাতুসমূহ,
যেনবা ছোট্ট নৌকা
যা বইছে
আমার জন্য অপেক্ষমান তোমার দ্বীপ অভিমূখে
ঠিক আছে, এখন,
যদি অল্প অল্প করে আমায় ভালোবাসাকমিয়ে দাও
আমিও অল্প অল্প করে তোমায় ভালোবাসা কমিয়ে দেব।
সহসা
তুমি আমায় ভুলে গিয়ে
আমার দিয়ে চেও না,
কেননা, এরই মধ্যে আমি তোমায় ভুলতে বসেছি।
যদি তুমি অনেকক্ষণ ধরে এসব ভাব আর পাগল হয়ে যাও-
পতাকার বাতাস
যা বয় আমার জীবনের মধ্য দিয়ে,
আর তুমি সিদ্ধান্ত নাও
আমায় ছেড়ে যাবে হৃদয়ের পাড়ে
যেখানে আমার শিকড়,
মনে রেখ যে:
ঐ দিনে,
ঐ মুহূর্তে,
আমি আমার হাত তুলব
আর আমার শিকড় যাত্রা করবে
অন্য কোনও ভূমির সন্ধানে।
কিন্তু,
প্রতি দিনে
প্রতি প্রহরে
তুমি অনুভব করবে আমিই তোমার
নিষ্ঠুর মধুর নিয়তি …
যদি প্রতিদিন একটি ফুল
আমায় খুঁজতে বেড়ে ওঠে তোমার ঠোঁটের দিকে-
আহ্ আমার প্রেম, আহ্ আমার আমি,
আমার ভিতরে সমস্ত আগুন পুর্নবার হয় আবর্তিত
আমার ভিতরে নিভে যায়নি কিছুই, কিংবা হয়নি বিস্মৃত
আমার প্রেম তোমার প্রেম পেয়ে বাঁচে, প্রিয়তম,
আর আমাকে পরিত্যাগ না করে যতদিন বাঁচবে
তোমার আলিঙ্গনে রবে আমার প্রেম।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
এখানে প্রবেশ করার জন্য ধন্যবাদ ধন্যবাদ ।