বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

কবিতা

ছবি
Facebook.com/gorabasunia এ পৃথিবীর বুকে তুমি প্রস্ফুটিত সব চেয়ে সুন্দর তম ফুল, শুধু তোমা কেই দেখার জন্যে আমার হৃদয় হয় আকুল, তোমাকে সুন্দর লাগে তাই দেখি সেকি মোর কোন ভুল ? তোমার জন্যে কেঁদে কেঁদে মরে আমার পরাণ বুলবুল। শিশিরে ভেজা পাপড়ির মত ঠোট মেঘের মত নরম চুল, ফুলের চেয়েও রূপসী যে তুমি হরিণ নয়ন তোমার অতুল । তোমার রুপের আসক্তিতে ভাসে আমার হৃদয়ের দু কূল, তুমি সব চেয়ে সুবাসিত বিনোদিনী আমার বাগিচার ফুল ।

জয় গোস্মামীর কবিতা সমূহ

জয় গোস্বামী পাগলী, তোমার সঙ্গে পাগলী, তোমার সঙ্গে ভয়াবহ জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে ধুলোবালি কাটাব জীবন এর চোখে ধাঁধা করব, ওর জল করে দেব কাদা পাগলী, তোমার সঙ্গে ঢেউ খেলতে যাব দু’কদম। অশান্তি চরমে তুলব, কাকচিল বসবে না বাড়িতে তুমি ছুঁড়বে থালা বাটি, আমি ভাঙব কাঁচের বাসন পাগলী, তোমার সঙ্গে বঙ্গভঙ্গ জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে ৪২ কাটাব জীবন। মেঘে মেঘে বেলা বাড়বে, ধনে পুত্রে লক্ষ্মী লোকসান লোকাসান পুষিয়ে তুমি রাঁধবে মায়া প্রপন্ঞ্চ ব্যন্জ্ঞন পাগলী, তোমার সঙ্গে দশকর্ম জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে দিবানিদ্রা কাটাব জীবন। পাগলী, তোমার সঙ্গে ঝোলভাত জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে মাংসরুটি কাটাব জীবন পাগলী, তোমার সঙ্গে নিরক্ষর জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে চার অক্ষর কাটাব জীবন। পাগলী, তোমার সঙ্গে বই দেখব প্যারামাউন্ট হলে মাঝে মাঝে মুখ বদলে একাডেমি রবীন্দ্রসদন পাগলী, তোমার সঙ্গে নাইট্যশালা জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে কলাকেন্দ্র কাটাব জীবন। পাগলী, তোমার সঙ্গে বাবুঘাট জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে দেশপ্রিয় কাটাব জীবন পাগলী, তোমার সঙ্গে সদা সত্য জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে ‘কী মিথ্যুক’ কাটাব জীবন। এক হাতে উপায় করব, দুহাতে উড়িয়ে দেবে তুমি রেস খেলব জুয়া ধরব ধারে কাটাব সহস্র রকম লটারি, তোমার সঙ্গে ধনলক্ষ্মী জীবন কাটাব লটারি, তোমার সঙ্গে মেঘধন কাটাব জীবন। দেখতে দেখতে পুজো আসবে, দুনিয়া চিত্‍কার করবে সেল দোকানে দোকানে খুঁজব রূপসাগরে অরূপরতন পাগলী, তোমার সঙ্গে পুজোসংখ্যা জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে রিডাকশনে কাটাব জীবন। পাগলী, তোমার সঙ্গে কাঁচা প্রুফ জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে ফুলপেজ কাটাব জীবন পাগলী, তোমার সঙ্গে লে আউট জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে লে হালুয়া কাটাব জীবন। কবিত্ব ফুড়ুত্‍ করবে, পিছু পিছু ছুটব না হা করে বাড়ি ফিরে লিখে ফেলব বড়ো গল্প উপন্যাসোপম পাগলী, তোমার সঙ্গে কথাশিল্প জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে বকবকম কাটাব জীবন। নতুন মেয়ের সঙ্গে দেখা করব লুকিয়ে চুরিয়ে ধরা পড়ব তোমার হাতে, বাড়ি ফিরে হেনস্তা চরম পাগলী, তোমার সঙ্গে ভ্যাবাচ্যাকা জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে হেস্তনেস্ত কাটাব জীবন। পাগলী, তোমার সঙ্গে পাপবিদ্ধ জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে ধর্মমতে কাটাব জীবন পাগলী, তোমার সঙ্গে পুজা বেদি জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে মধুমালা কাটাব জীবন। দোঁহে মিলে টিভি দেখব, হাত দেখাতে যাব জ্যোতিষীকে একুশটা উপোস থাকবে, ছাব্বিশটা ব্রত উদযাপন পাগলী, তোমার সঙ্গে ভাড়া বাড়ি জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে নিজ ফ্ল্যাট কাটাব জীবন। পাগলী, তোমার সঙ্গে শ্যাওড়াফুলি জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে শ্যামনগর কাটাব জীবন পাগলী, তোমার সঙ্গে রেল রোকো জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে লেট স্লিপ কাটাব জীবন। পাগলী, তোমার সঙ্গে আশাপূর্ণা জীবন কাটাব আমি কিনব ফুল, তুমি ঘর সাজাবে যাবজ্জীবন পাগলী, তোমার সঙ্গে জয় জওয়ান জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে জয় কিষান কাটাব জীবন। সন্ধেবেলা ঝগড়া হবে, হবে দুই বিছানা আলাদা হপ্তা হপ্তা কথা বন্ধ মধ্যরাতে আচমকা মিলন পাগলী, তোমার সঙ্গে ব্রক্ষ্মচারী জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে আদম ইভ কাটাব জীবন। পাগলী, তোমার সঙ্গে রামরাজ্য জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে প্রজাতন্ত্রী কাটাব জীবন পাগলী, তোমার সঙ্গে ছাল চামড়া জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে দাঁতে দাঁত কাটাব জীবন। এর গায়ে কনুই মারব রাস্তা করব ওকে ধাক্কা দিয়ে এটা ভাঙলে ওটা গড়ব, ঢেউ খেলব দু দশ কদম পাগলী, তোমার সঙ্গে ধুলোঝড় জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে ‘ভোর ভয়োঁ’ কাটাব জীবন। প্রেমিক তুমি আমাকে মেঘ ডাকবার যে বইটা দিয়েছিলে একদিন আজ খুলতেই দেখি তার মধ্যে এক কোমর জল। পরের পাতায় গিয়ে সে এক নদীর অংশ হয়ে দূরে বেঁকে গেছে। আমাকে তুমি উদ্ভিদ ভরা যে বইটা দিয়েছিলে আজ সেখানে এক পা-ও এগোনো যাচ্ছে না, এত জঙ্গল। গাছগুলো এত বড় হয়েছে যে মাটিতে আলো আসতে দিচ্ছে না। তুমি আমাকে ঝর্ণা শেখবার যে বইটা দিয়েছিলে আজ সেখানে মস্ত এক জলপ্রপাত লাফিয়ে পড়ছে সারাদিন। এমনকি তোমার দেওয়া পেজ-মার্কের সাদা পালকটাও যে বইতে রেখেছিলাম, সেখানে আজ কত সব পাখি উড়ছে, বসছে, সাঁতার কাটছে। তোমার দেওয়া সব বই এখন মরুভূমি আর পর্বতমালা, সব বই আজ সূর্য, সব বই দিগন্ত … অথচ আজকেই যে আমার লাইব্রেরি দেখতে আসছে বন্ধুরা আমার পড়াশোনা আছে কিনা জানার জন্য! তাদের আমি কী দেখাবো? তাদের সামনে কোন মুখে দাঁড়াবো আমি! মেঘ বলতে আপত্তি কি মেঘ বলতে আপত্তি কি ? বেশ, বলতে পরি ছাদের ওপোর মেঘ দাঁড়াতো ফুলপিসিমার বাড়ি গ্রীষ্ম ছুটি চলছে তখন তখন মানে ? কবে ? আমার যদি চোদ্দো, মেঘের ষোলো-সতেরো হবে ছাদের থেকে হাতছানি দিতো ক্যারাম খেলবি ? … আয় … সারা দুপুর কাহাঁতক আর ক্যারম খেলা যায় সেই জন্যেই জোচ্চুরি হয় হ্যাঁ, জোচ্চুরি হতো আমার যদি চোদ্দো, মেঘের পনেরো-ষোলো মত। ঘুরিয়ে দিতে জানতো খেলা শক্ত ঘুঁটি পেলে জায়গা মত সরিয়ে নিতো আঙ্গুল দিয়ে ঠেলে শুধু আঙ্গুল ? … বোর্ডের উপর লম্বা ফ্রকের ঝুল ঝপাং ফেলে ঘটিয়ে দিতো ঘুঁটির দিক ভুল এই এখানে … না ওখানে .. এই এইটা না ঐটা ঝাঁপিয়ে পরে ছিনিয়ে নিলো ঘুঁটির বাক্সটা ঘুঁটির ও সেই প্রথম মরন প্রথম মরা মানে ? বুঝবে শুধু তারাই … যারা ক্যারাম খেলা জানে। চলেও গেলো কদিন পরে .. মেঘ যেমন যায় কাঠফাটা রোদ দাঁড়িয়ে পড়ল মেঘের জায়গায় খেলা শেখাও, খেলা শেখাও, হাপিত্যেস কাক কলসিতে ঠোঁট ডুবিয়ে ছিলো, জল তো পুরে খাক খাক হোয়া সেই কলশি আবার পরের বছর জলে … ভরল কেমন তোমায় ? … ধ্যাত্, সেসব কি কেউ বলে ? … আত্মীয় হয় .. আত্মীয় হয় ? আত্মীয় না ছাই সত্যি করে বল এবার, সব জানতে চাই দু এক ক্লাস এর বয়স বেশি, গ্রীষ্ম ছুটি হলে ঘুরেও গেছে কয়েক বছর, এই জানে সক্কলে আজকে দগ্ধ গ্রীষ্ম আমার তোমায় বলতে পারি মেঘ দেখতাম, ছাদের ঘরে, ফুলপিসিমার বাড়ি। টিউটোরিয়াল তোমাকে পেতেই হবে শতকরা অন্তত নব্বই (বা নব্বইয়ের বেশি) তোমাকে হতেই হবে একদম প্রথম তার বদলে মাত্র পঁচাশি! পাঁচটা নম্বর কম কেন? কেন কম? এই জন্য আমি রোজ মুখে রক্ত তুলে খেটে আসি? এই জন্যে তোমার মা কাক ভোরে উঠে সব কাজকর্ম সেরে ছোটবেলা থেকে যেতো তোমাকে ইস্কুলে পৌঁছে দিতে? এই জন্য কাঠফাটা রোদ্দুরে কি প্যাচপ্যাচে বর্ষায় সারাদিন বসে থাকতো বাড়ির রোয়াকে কিংবা পার্কের বেঞ্চিতে? তারপর ছুটি হতে, ভিড় বাঁচাতে মিনিবাস ছেড়ে অটো-অলাদের ঐ খারাপ মেজাজ সহ্য করে বাড়ি এসে, না হাঁপিয়ে, আবার তোমার পড়া নিয়ে বসে পড়তো, যতক্ষণ না আমি বাড়ি ফিরে তোমার হোমটাস্ক দেখছি, তারপরে আঁচলে মুখ মুছে ঢুলতো গিয়ে ভ্যাপসা রান্নাঘরে? এই জন্যে? এই জন্যে হাড়ভাঙা ওভারটাইম করে তোমার জন্য আন্টি রাখতাম? মোটা মাইনে, ভদ্রতার চা-জলখাবার হপ্তায় তিনদিন, তাতে কত খরচা হয় রে রাস্কেল? বুদ্ধি আছে সে হিসেব করবার? শুধু ছোটকালে নয়, এখনো যে টিউটোরিয়ালে পাঠিয়েছি, জানিস না, কিরকম খরচাপাতি তার? ওখানে একবার ঢুকলে সবাই প্রথম হয়। প্রথম, প্রথম! কারো অধিকার নেই দ্বিতীয় হওয়ার। রোজ যে যাস, দেখিস না কত সব বড় বড় বাড়ি ও পাড়ায় কত সব গাড়ি আসে, কত বড় আড়ি করে বাবা মা-রা ছেলেমেয়েদের নিতে যায়? আর ঐ গাড়ির পাশে, পাশে না পিছনে- ঐ অন্ধকারটায় রোজ দাঁড়াতে দেখিস না নিজের বাবাকে? হাতে অফিসের ব্যাগ, গোপন টিফিন বাক্স, ঘেমো জামা, ভাঙা মুখ - দেখতে পাসনা? মন কোথায় থাকে? ঐ মেয়েগুলোর দিকে? যারা তোর সঙ্গে পড়তে আসে? ওরা তোকে পাত্তা দেবে? ভুলেও ভাবিস না! ওরা কত বড়লোক! তোকে পাত্তা পেতে হলে থাকতে হবে বিদেশে, ফরেনে এন আর আই হতে হবে! এন আর আই, এন আর আই! তবেই ম্যাজিক দেখবি কবিসাহিত্যিক থেকে মন্ত্রী অব্দি একডাকে চেনে আমাদেরও নিয়ে যাবি, তোর মাকে, আমাকে মাঝে মাঝে রাখবি নিজের কাছে এনে তার জন্য প্রথম হওয়া দরকার প্রথমে তাহলেই ছবি ছাপবে খবর কাগজ আরো দরজা খুলে যাবে, আরো পাঁচ আরো পাঁচ আরো আরো পাঁচ পাঁচ পাঁচ করেই বাড়বে, অন্য দিকে মন দিস না, বাঁচবি তো বাঁচার মত বাঁচ! না বাপী না, না না বাপী, আমি মন দিই না কোনোদিকে না বাপী না, না না আমি তাকাই না মেয়েদের দিকে ওরা তো পাশেই বসে, কেমন সুগন্ধ আসে, কথা বলে, না না বাপী পড়ার কথাই দেখি না, উত্তর দিই, নোট দিই নোট নিই যেতে আসতে পথে ঘাটে কত ছেলে মেয়ে গল্প করে না বাপী না, আমি মেয়েদের সঙ্গে মিশতে যাই না কখোনো যেতে আসতে দেখতে পাই কাদা মেখে কত ছেলে বল খেলছে মাঠে কত সব দুষ্টু ছেলে পার্কে প্রজাপতি ধরছে চাকা বা ডাঙ্গুলি খেলছে কত ছোটোলোক না, আমি খেলতে যাই না কখোনো খেলতে যাইনি। না আমার বন্ধু নেই না বাপী না, একজন আছে, অপু, একক্লাসে পড়ে ও বলে যে ওর বাবাও বলেছে প্রথম হতে বলেছে, কাগজে ছবি, ওর বাবা, ওকে …. হ্যাঁ বাপী হ্যাঁ, না না বাপী, অপু বলেছে পড়াশোনা হয়নি একদম বলেছে ও ব্যাক পাবে, ব্যাক পেলে ও বলেছে, বাড়িতে কোথায় বাথরুম সাফ করার অ্যাসিড আছে ও জানে, হ্যাঁ বাপী হ্যাঁ, ও বলেছে, উঠে যাবে কাগজের প্রথম পাতায় ….. স্নান সংকোচে জানাই আজ: একবার মুগ্ধ হতে চাই। তাকিয়েছি দূর থেকে। এতদিন প্রকাশ্যে বলিনি। এতদিন সাহস ছিল না কোনো ঝর্ণাজলে লুণ্ঠিত হবার - আজ দেখি অবগাহনের কাল পেরিয়ে চলেছি দিনে দিনে … জানি, পুরুষের কাছে দস্যুতাই প্রত্যাশা করেছো। তোমাকে ফুলের দেশে নিয়ে যাবে ব’লে যে-প্রেমিক ফেলে রেখে গেছে পথে, জানি, তার মিথ্যে বাগদান হাড়ের মালার মতো এখনো জড়িয়ে রাখো চুলে। আজ যদি বলি, সেই মালার কঙ্কালগ্রন্থি আমি ছিন্ন করবার জন্য অধিকার চাইতে এসেছি? যদি বলি আমি সে-পুরুষ, দ্যাখো, যার জন্য তুমি এতকাল অক্ষত রেখেছো ওই রোমাঞ্চিত যমুনা তোমার? শোনো, আমি রাত্রিচর। আমি এই সভ্যতার কাছে এখনো গোপন ক’রে রেখেছি আমার দগ্ধ ডানা; সমস্ত যৌবন ধ’রে ব্যধিঘোর কাটেনি আমার। আমি একা দেখেছি ফুলের জন্ম মৃতের শয্যার পাশে বসে, জন্মান্ধ মেয়েকে আমি জ্যোৎস্নার ধারণা দেব ব’লে এখনো রাত্রির এই মরুভুমি জাগিয়ে রেখেছি। দ্যাখো, সেই মরুরাত্রি চোখ থেকে চোখে আজ পাঠালো সংকেত - যদি বুঝে থাকো তবে একবার মুগ্ধ করো বধির কবিকে; সে যদি সংকোচ করে, তবে লোকসমক্ষে দাঁড়িয়ে তাকে অন্ধ করো, তার দগ্ধ চোখে ঢেলে দাও অসমাপ্ত চুম্বন তোমার… পৃথিবী দেখুক, এই তীব্র সূর্যের সামনে তুমি সভ্য পথচারীদের আগুনে স্তম্ভিত ক’রে রেখে উন্মাদ কবির সঙ্গে স্নান করছো প্রকাশ্য ঝর্ণায়। আজ যদি আমাকে জিগ্যেস করো আজ যদি আমাকে জিগ্যেস করো : ‘এই জীবন নিয়ে তুমি কি করেছো এতদিন ?’— তাহলে আমি বলবো একদিন বমি করেছিলাম, একদিন ঢোঁক গিলেছিলাম, একদিন আমি ছোঁয়া মাত্র জল রুপান্তরিত হয়েছিল দুধে, একদিন আমাকে দেখেই এক অপ্সরার মাথা ঘুরে গিয়েছিল একদিন আমাকে না বলেই আমার দুটো হাত কদিনের জন্য উড়ে গেছিল হাওয়ায় একদিন মদ হিসেবে ঢুকেছিলাম এক জবরদস্ত মাতালের পেটে, একদিন সম্পূর্ণ অন্যভাবে বেরিয়ে এসেছিলাম এক রূপসীর শোকাশ্রুরুপে, আর তৎক্ষণাৎ আহা উহু আহা উহু করতে করতে আমাকে শুষে নিয়েছিল বহুমূল্য মসলিন একদিন গায়ে হাত তুলেছিলাম একদিন পা তুলেছিলাম একদিন জিভ ভেঙিয়েছিলাম একদিন সাবান মেখেছিলাম একদিন সাবান মাখিয়েছিলাম যদি বিশ্বাস না হয় তো জিগ্যেস করুন আমার মৃত্যুকে একদিন কা কা করে ডেকে বেরিয়েছিলাম সারাবেলা একদিন তাড়া করেছিলাম স্বয়ং কাকতাড়ুয়াকেই একদিন শুয়োর পুষেছিলাম, হ্যাঁ হ্যাঁ একদিন ছাগল একদিন দোদোমা ফাটিয়েছিলাম, একদিন চকলেট একদিন বাঁশি বাজিয়েছিলাম, হ্যাঁ হ্যাঁ একদিন রাধাকেও একদিন আমার মুখ আমি আচ্ছা ক’রে গুঁজে দিয়েছিলাম একজনের কোলে আর আমার বাকি শরীরটা তখন কিনে নিয়েছিল অন্য কেউ কে তা আমি এখনো জানি না যদি বিশ্বাস না হয় তো জিগ্যেস করো গিয়ে তোমার… একদিন আমার শরীর ছিল তরুণ পাতায় ভরা আর আমার আঙুল ছিল লম্বা সাদা বকফুল আমার চুল ছিল একঝাঁক ধূসর রঙের মেঘ হাওয়া এলেই যেখানে খুশি উড়ে যাবে, কেবল সেইজন্য— একদিন মাঠের পর মাঠে আমি ছিলাম বিছিয়ে রাখা ঘাস তুমি এসে শরীর ঢেলে দেবে, কেবল সেইজন্য— আর সমস্ত নিষেধের বাইরে ছিল আমার দুটো চোখ এ নদী থেকে ও নদী থেকে সেই সে নদীতে কেবলই ভেসে বেড়াতো তারা সেই রকমই কোনো নদীর উপর, রোগা একটা সাঁকোর মতো একদিন আমি পেতে রেখেছিলাম আমার সাষ্টাঙ্গ শরীর যাতে এপার থেকে ওপারে চলে যেতে পারে লোক কোনো বাধা-নিষেধ ছাড়াই যাতে ওপার থেকে এপারে চলে আসতে পারে লোক কোনো বাধা-নিষেধ ছাড়াই সেই সাঁকোর উপর দিয়ে একদিন এপার থেকে ওপারে চলে গিয়েছিল আসগর আলি মণ্ডলরা বাবুল ইসলামরা সেই সাঁকোর উপর দিয়ে একদিন ওপার থেকে এপারে চলে এসেছিল তোমার নতুন শাড়ি-পরা মা, টেপ-জামা-পরা আমার সান্তুমাসী একদিন সংবিধান লিখতে লিখতে একটু তন্দ্রা এসে গিয়েছিল আমার দুপুরের ভাত-ঘুম মতো এসেছিল একটু আর সেই ফাঁকে কারা সব এসে ইচ্ছে মতো কাটাকুটি করে গিয়েছে দেহি পদপল্লব মুদারম্‌ একদিন একদম ন্যাংটো হয়ে ছুটতে ছুটতে চৌরাস্তার মোড়ে এসে আমি পেশ করেছিলাম বাজেট একদিন হাঁ করেছিলাম একদিন হাঁ বন্ধ করেছিলাম কিন্তু আমার হা-এর মধ্যে কোনো খাবার ছিল না কিন্তু আমার না-এর মধ্যে কোনো খাবার ছিল না একদিন দুই গাল বেয়ে ঝরঝর ক’রে রক্তগড়ানো অবস্থায় জলে কাদায় ধানক্ষেত পাটক্ষেতের মধ্যে হাতড়ে হাতড়ে আমি খুঁজে ফিরেছিলাম আমার উপড়ে নেওয়া চোখ একদিন পিঠে ছরা-গাঁথা অবস্থায় রক্ত কাশতে কাশতে আমি আছড়ে এসে পরেছিলাম দাওয়ায় আর দলবেঁধে, লণ্ঠন উঁচু করে, আমায় দেখতে এসেছিল গ্রামের লোক একদিন দাউদাউ ক’রে জ্বলতে থাকা ঝোপঝাড় মধ্য থেকে সারা গায়ে আগুন নিয়ে আমি ছুটে বেরিয়েছিলাম আর লাফ দিয়েছিলাম পচা পুকুরে পরদিন কাগজে সেই খবর দেখে আঁতকে উঠেছিলাম উত্তেজিত হয়েছিলাম। অশ্রুপাত করেছিলাম, লোক জড়ো করেছিলাম, মাথা ঘামিয়েছিলাম আর সমবেত সেই মাথার ঘাম ধরে রেখেছিলাম দিস্তে দিস্তে দলিলে—যাতে পরবর্তী কেউ এসে গবেষণা শুরু করতে পারে যে এই দলিলগুলোয় আগুন দিলে ক’জনকে পুড়িয়ে মারা যায় মারো মারো মারো স্ত্রীলোক ও পুরুষলোকের জন্যে আয়ত্ত করো দু ধরনের প্রযুক্তি মারো মারো মারো যতক্ষণ না মুখ দিয়ে বমি করে দিচ্ছে হৃৎপিণ্ড মারো মারো মারো যতক্ষণ না পেট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে পেটের বাচ্চা মারো মারো মারো মারো মারো-ও-ও-ও এইখানে এমন এক আর্তনাদ ব্যবহার করা দরকার যা কানে লাগলে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে মাথার খুলি এইখানে এমন এক সঙ্গম ব্যাবহার করা দরকার যার ফলে অর্ধেক শরীর চিরকালের মতো পুঁতে যাবে ভূগর্ভে আর দ্রুত কয়লা হয়ে যাবে এইখানে এমন এক থুতু নিক্ষেপ করা দরকার যে-থুতু মুখ থেকে বেরোনো মাত্রই বিদীর্ণ হবে অতিকায় নক্ষত্ররুপে এইখানে এমন এক গান ব্যাবহার করা দরকার যা গাইবার সময় নায়ক-নায়িকা শূনে উঠে গিয়ে ভাসতে থাকবে আর তাদের হাত পা মুণ্ডু ও জননেন্দিয়গুলি আলাদা আলাদা হয়ে আসবে ও প্রতিটি প্রতিটির জন্যে কাঁদবে প্রতিটি প্রতিটিকে আদর করবে ও একে অপরের নিয়ে কী করবে ভেবে পাবে না, শেষে পূর্বের অখণ্ড চেহারায় ফিরে যাবে এইখানে এমন এক চুম্বন-চেষ্টা প্রয়োগ করা দরকার, যার ফলে ‘মারো’ থেকে ‘ও’ অক্ষর ‘বাচাও’ থেকে ‘ও’ অক্ষর তীব্র এক অভিকর্ষজ টানে ছিঁড়ে বেরিয়ে এসে পরস্পরের দিকে ছুটে যাবে এবং এক হয়ে যেতে চাইবে আর আবহমানকালের জন্যে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া দুই প্রেমিক-প্রেমিকার মুখ আকাশের দিকে উত্তোলিত তাদের গোল হয়ে থাকা হাঁ একটি অনন্ত ‘ও’ ধ্বনিতে স্তব্ধ হয়ে থাকবে আজ যদি আমায় জিগ্যেস করো শত শত লাইন ধ’রে তুমি মিথ্যে লিখে গিয়েছো কেন ? যদি জিগ্যেস করো একজন কবির কাজ কী হওয়া উচিত কেন তুমি এখনো শেখোনি ?—তাহলে আমি শুধু বলবো একটি কণা, বলবো, বালির একটি কণা থেকে আমি জন্মেছিলাম, জন্মেছিলাম লবণের একটি দানা থেকে—আর অজানা অচেনা এক বৃষ্টিবিন্দু কত উঁচু সেই গাছের পাতা থেকেও ঠিক দেখতে পেয়েছিল আমাকে আর ঝরেও পড়েছিল আমার পাশে—এর বেশি আমি আর কিচ্ছু জানি না…… আজ যদি আমাকে জিগ্যেস করো কোন্‌ ব্যূহ কোন্‌ অন্ধকুপ রাষ্টের কোন্‌ কোন্‌ গোপন প্রণালীর ভেতর তুমি ঘুরে বেরিয়েছো তুমি বেড়াতে গিয়েছো কোন্‌ অস্ত্রাগারে তুমি চা খেয়েছো এক কাপ তুমি মাথা দিয়ে ঢুঁসিয়েছো কোন্‌ হোর্ডিং কোন্‌ বিজ্ঞাপন কোন্‌ ফ্লাইওভার তোমার পায়ের কাছে এসে মুখ রেখেছে কোন্‌ হরিণ তোমার কাছে গলা মুচড়ে দেওয়ার আবেদন এনেছে কোন্‌ মরাল তাহলে আমি বলবো মেঘের উপর দিয়ে মেঘের উপর দিয়ে মেঘের উপর আমি কেবল উড়েই বেড়াইনি হাজার হাজার বৃষ্টির ফোঁটায় ফোঁটায় আমি লাফিয়ে লাফিয়ে নেচে বেরিয়েছি মাঠে আর জনপদে আজ যদি আমায় জিগ্যেস করো : তুমি একই বৃন্তে ক’টি কুসুম তুমি শাণ্ডিল্য না ভরদ্বাজ তুমি দুর্লভ না কৈবর্ত তুমি ব্যাটারি না হাত-বাক্স তুমি পেঁপে গাছ না আতা গাছ তুমি চটি পায়ে না জুতো পায়ে তুমি চণ্ডাল না মোছরমান তুমি মরা শিলা না জ্যান্ত শিলা তা হলে আমি বলবো সেই রাত্রির কথা, যে-রাত্রে শান্ত ঘাসের মাঠ ফুঁড়ে নিঃশব্দে নিঃশব্দে চতুর্দিকে মাটি পাথর ছিটকোতে ছিটকোতে তীব্রগতিতে আমি উড়তে দেখেছিলাম এক কুতুন মিনার, ঘূর্ণ্যমান কুতুব মিনার কয়েক পলকে শূনে মিলিয়ে যাবার আগে আকাশের গায়ে তার ধাবমান আগুনের পুচ্ছ থেকে আমি সেদিন দুদিকে দু’হাত ভাসিয়ে দিয়ে ঝাঁপ দিয়েছিলাম ফেনায় তোলপাড় এই সময় গর্ভে…… আজ আমি দূরত্বের শেষ সমুদ্রে আর জলের নিচে লোহার চাকা পাক খায় আজ আমি সমুদ্রের সেই সূচনায় আর জলের নিচে লোহার চাকা পাক খায় যা-কিছু শরীর অশরীর তা-ই আজ আমার মধ্যে জেগে উঠছে প্রবল প্রাণ আজ আমি দুই পাখনায় কাটতে কাটতে চলেছি সময় অতীত আর ভবিষ্যৎ দুই দিকে কাটতে কাটতে চলেছি সময় এক অতিকায় মাছ আমার ল্যাজের ঝাপটায় ঝাপটায় গড়ে উঠছে জলস্তম্ভ ভেঙে পরছে জলস্তম্ভ আমার নাক দিয়ে ছুঁড়ে দেওয়া ফোয়ারায় উচ্ছ্রিত হয়ে উঠছে জ্বলন্ত মেঘপুঞ্জ আমার নাসার উপরকার খড়্গে বাঁধা রয়েছে একটি রশি যার অপরপ্রান্ত উঠে গেছে অনেক অনেক উপরে এই পৃথিবী ও সৌরলোকের আকর্ষণসীমার বাইরে যেখানে প্রতি মুহূর্তে ফুলে ফুলে উঠছে অন্ধকার ঈথার সেইখানে, একটি সৌরদ্বীপ থেকে আরেক সৌরদ্বীপের মধ্যপথে দুলতে দুলতে, ভাসতে ভাসতে চলেছে একটি আগ্নেয় নৌকা…… এর বেশি আর কিছুই আমি বলতে পারবো না

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভালবাসার কবিতা

নষ্ট হবে

এত হাসি কোথায় পেলে