বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

কবিতা

ছবি
Facebook.com/gorabasunia এ পৃথিবীর বুকে তুমি প্রস্ফুটিত সব চেয়ে সুন্দর তম ফুল, শুধু তোমা কেই দেখার জন্যে আমার হৃদয় হয় আকুল, তোমাকে সুন্দর লাগে তাই দেখি সেকি মোর কোন ভুল ? তোমার জন্যে কেঁদে কেঁদে মরে আমার পরাণ বুলবুল। শিশিরে ভেজা পাপড়ির মত ঠোট মেঘের মত নরম চুল, ফুলের চেয়েও রূপসী যে তুমি হরিণ নয়ন তোমার অতুল । তোমার রুপের আসক্তিতে ভাসে আমার হৃদয়ের দু কূল, তুমি সব চেয়ে সুবাসিত বিনোদিনী আমার বাগিচার ফুল ।

একটি ফটোগ্রাফ

শামসুর রাহমান আমার মৃত্যুর পরেও যদি একটি পাখী রোজ আমার জানালায় আস্তে এসে বসে, তাকায় আশেপাশে। কখনো দেয় শিস, বাড়ায় গলা তার; আবার কখনোবা পাখাটা ঝাপটায়। পালকে তার আঁকা কিসের ছবি যেন, দু’চোখে আছে জমা মেঘের স্মৃতি কিছু; নদীর স্বপ্নের জলজ কণাগুলি এখনো তাঁর ঠোটে হয়তো গচ্ছিত। কাউকে নীড়ে তার এসেছে ফেলে বুঝি? হয়তো সেই নীড়, আকাশই আস্তানা। তাই তো চোখ তার এমন গাঢ় নীল, মেললে পাখা জাগে নীলের উৎসব। যখন লিখি আমি টেবিলে ঝুঁকে আর পড়তে বসি বই, তখন সেই পাখি চকিতে দোল খায় আমার জানালায়- খাতার পাতা জুড়ে ছড়িয়ে দেয় খুশি। আমার মৃত্যুর পরেও যদি সেই সুনীল পাখি আসে আমার জানালায়, আবার শিস দেয়, আমার বইখাতা যদি সে ঠোকরায়, দিও না বাধা তাকে। উত্তর বৃক্ষের নিকটে গিয়ে বলি ; দয়াবান বৃক্ষ তুমি একটি কবিতা দিতে পারো ? বৃক্ষ বলে আমার বাকল ফুঁড়ে আমার মজ্জায় যদি মিশে যেতে পারো, তবে হয়তো বা পেয়ে যাবে একটি কবিতা ! জীর্ণ দেয়ালের কানে বলি ; দেয়াল আমাকে তুমি একটি কবিতা দিতে পারো ? পুরোনো দেয়াল বলে শ্যাওলা-ঢাকা স্বরে, এই ইঁট সুরকির ভেতর যদি নিজেকে গুঁড়িয়ে দাও, তবে হয়তো বা পেয়ে যাবে একটি কবিতা ! একজন বৃদেধের নিকট গিয়ে বলি, নতজানু, হে প্রাচীন দয়া ক’রে দেবেন কি একটি কবিতা ? স্তব্ ধতার পর্দা ছিঁড়ে বেজে ওঠে প্রাজ্ঞ কণ্ঠে – যদি আমার মুখের রেখাবলী তুলে নিতে পারো নিজের মুখাবয়বে, তবে হয়তো বা পেয়ে যাবে একটি কবিতা। কেবল কয়েক ছত্র কবিতার জন্যে এই বৃক্ষ, জরাজীর্ণ দেয়াল এবং বৃদ্ধের সম্মুখে নতজানু আমি থাকবো কতোকাল ? বলো কতোকাল ? যদি তুমি ফিরে না আসো তুমি আমাকে ভুলে যাবে, আমি ভাবতেই পারি না। আমাকে মন থেকে মুছে ফেলে তুমি আছো এই সংসারে, হাঁটছো বারান্দায়, মুখ দেখছো আয়নায়, আঙুলে জড়াচ্ছো চুল, দেখছো তোমার সিঁথি দিয়ে বেরিয়ে গেছে অন্তুহীন উদ্যানের পথ, দেখছো তোমার হাতের তালুতে ঝলমল করছে রূপালিশহর, আমাকে মন থেকে মুছে ফেলে তুমি অস্তিত্বের ভূভাগে ফোটাচ্ছো ফুল আমি ভাবতেই পারি না। যখনই ভাবি, হঠাৎ কোনো একদিন তুমি আমাকে ভুলে যেতে পারো, যেমন ভুলে গেছো অনেকদিন আগে পড়া কোনো উপন্যাস, তখন ভয় কালো কামিজ প’রে হাজির হয় আমার সামনে, পায়চারি করে ঘন ঘন মগজের মেঝেতে, তখন একটা বুনো ঘোড়া খুরের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে আমাকে, আর আমার আর্তনাদ ঘুরপাক খেতে খেতে অবসন্ন হয়ে নিশ্চুপ এক সময়, যেমন ভ্রষ্ট পথিকের চিৎকার হারিয়ে যায় বিশাল মরুভূমিতে। বিদায় বেলায় সাঝটাঝ আমি মানি না আমি চাই ফিরে এসো তুমি স্মৃতি বিস্মৃতির প্রান্তর পেরিয়ে শাড়ীর ঢেউ তুলে,সব অশ্লীল চিৎকার সব বর্বর বচসা স্তব্দ করে ফিরে এসো তুমি, ফিরে এসো স্বপ্নের মতো চিলেকোঠায় মিশে যাও স্পন্দনে আমার। সুধাংশু যাবে না পাগলামী করিসনে বন্ধু সুধাংশু সময় যে পার হয়ে যাচ্ছে এবার যে তোর পালানোর বেলা জিদ করিসনে বন্ধু, এখনই তুই পালা। জানি তুই কী ভাবছিস বন্ধু সুধাংশু দাঁড়িয়ে হাহাকারের ছোঁয়ায় জড়ানো শ্মশানসম বাস্তুভিটায় সেই হারিয়ে যাওয়া প্রাণচঞ্চল দিনগুলো, আমাদের ছেলেবেলা কিন্তু এবার যে তোর পালানোর বেলা, এবার তুই পালা। আমি জানি নির্বাক দাঁড়িয়ে তুই কী ভাবছিস বন্ধু সুধাংশু সেই একপাল বন্ধুগুলো ­ রামী, শেপু, কাকলী আরও অনেকে প্রাণময় কোলাহলে কাটিয়েছি সকাল-দুপুর-সন্ধ্যা বেলা কিন্তু এবার যে তোকে পালাতে হবে, এবার তুই পালা। আমি বুঝি তোর শঙ্কা আগামী বিরহ বেদনারবন্ধু সুধাংশু আড়াই যুগ ধরে তিলে তিলে গড়ে উঠা আত্মার সম্পর্ক ­- এই বাস্তুভিটার সাথে আর একঝাঁক বন্ধুর ভালবাসা প্রাণঢালা। কিন্তু এবার যে তোকে পালাতে হবে, এবার তুই পালা। কোথায় সেই কল-কাকলীতে মুখরিত সবুজ সুন্দর কাপালী-ভিটাটি বন্ধু সুধাংশু দু’টি জীর্ণ-শীর্ণ ঘর চির-দুঃখীর মতো দাঁড়িয়ে আছে আজ সেই কাপালী ভিটায়। কোথায় সেই রামী, শেপু, কাকলী আরও সেই প্রিয় বন্ধুগুলা ওরা যে সবাই পালিয়েছে, এবার তোর পালা। তুই কি জানিস বন্ধু সুধাংশু তোর বিদায়ে ভীষণ ব্যথা পাবে আমার ঐ ছ’বছরের অবুঝ বোনটি ‘নেহা’ কাটাবে কত সন্ধ্যা অধীর প্রত্যাশায়, সুধাংশু ভাইকে জড়িয়ে ধরবেঃ ­ কোথায় চকলেটগুলা? তবুও তোকে পালাতে হবে যে, এবার তুই পালা। আরও জানি বন্ধু সুধাংশু তোর ষোড়শী বোনটি ‘মিলা’ দুষ্টামির ছলে আর বলতে পারবে নাঃ আলমদা তুমি এত কৃপণ কেন? চলো মেলায় নিয়ে, কিনে দিতে হবে সুন্দর একটি মালা। তথাপি তোকে পালাতে যে হবে, এবার তুই পালা। তোকে যে বলা হয় নি বন্ধু সুধাংশু মিলা’র সহপাঠী আমার ভাইটি ‘রিপন’ বলছিলসেদিনঃ ভাইয়া মিলা’টা যা সুন্দর হয়েছে না! বলে দিয়েছি ওকে, সুন্দরী মেধাবী মিলাবিশ্ব জয় করবে, তোর মতো গর্দভটি ওর দিকে তাকাবে না। তোর হাতে যে সময় নেই বন্ধু, এবার তুই পালা। মিলাকে যে বিশ্ব জয় করতেই হবে বন্ধু সুধাংশু অসাধারণ সুন্দরী মেধাবী মিলার জন্য এক ধর্ষিত, অচ্ছুৎ, অভাগী নারীর জীবন হবে মানবতার জন্য এক অমার্জনীয় ব্যর্থতা। তাই আমার কাতর মিনতি বন্ধু, এখনই তুই পালা। বন্দী শিবির থেকে ঈর্ষাতুর নই, তবু আমি তোমাদের আজ বড় ঈর্ষা করি। তোমরা সুন্দর জামা পরো, পার্কের বেঞ্চিতে বসে আলাপ জমাও, কখনো সেজন্যে নয়। ভালো খাও দাও, ফুর্তি করো সবান্ধব সেজন্যেও নয়। বন্ধুরা তোমরা যারা কবি, স্বাধীন দেশের কবি, তাদের সৌভাগ্যে আমি বড়ো ঈর্ষান্বিত আজ। যখন যা খুশি মনের মতো শব্দ কী সহজে করো ব্যবহার তোমরা সবাই। যখন যে শব্দ চাও, এসে গেলে সাজাও পয়ারে, কখনো অমিত্রাক্ষরে, ক্ষিপ্র মাত্রাবৃত্তে কখনো-বা। সেসব কবিতাবলী, যেন রাজহাঁস দৃপ্ত ভঙ্গিমায় মানুষের অত্যন্ত নিকটে যায়, কুড়ায় আদর। অথচ এদেশে আমি আজ দমবদ্ধ এ বন্দী-শিবিরে মাথা খুঁড়ে মরলেও পারি না করতে উচ্চারণ মনের মতন শব্দ কোনো। মনের মতন সব কবিতা লেখার অধিকার ওরা করেছে হরণ। প্রকাশ্য রাস্তায় যদি তারস্বরে চাঁদ, ফুল, পাখি এমনকি নারী ইত্যাকার শব্দাবলী করি উচ্চারণ, কেউ করবে না বারণ কখনো। কিন্তু কিছু শব্দকে করেছে বেআইনী ওরা ভয়ানক বিস্ফোরক ভেবে। স্বাধীনতা নামক শব্দটি ভরাট গলায় দীপ্ত উচ্চারণ করে বারবার তৃপ্তি পেতে চাই। শহরের আনাচে কানাচে প্রতিটি রাস্তায় অলিতে-গলিতে, রঙিন সাইনবোর্ড, প্রত্যেক বাড়িতে স্বাধীনতা নামক শব্দটি আমি লিখে দিতে চাই বিশাল অক্ষরে। স্বাধীনতা শব্দ এত প্রিয় যে আমার কখনো জানিনি আগে। উঁচিয়ে বন্দুক, স্বাধীনতা, বাংলাদেশ- এই মতো শব্দ থেকে ওরা আমাকে বিচ্ছিন্ন করে রাখছে সর্বদা। অথচ জানেনা ওরা কেউ গাছের পাতায়, ফুটপাতে পাখির পালকে কিংবা নারীর দু’চোখে পথের ধুলায় বস্তির দুরন্ত ছেলেটার হাতের মুঠোয় সর্বদাই দেখি জ্বলে স্বাধীনতা নামক শব্দটি। একটি ফটোগ্রাফ ‘এই যে আসুন, তারপর কী খবর? আছেন তো ভাল? ছেলেমেয়ে?’ কিছু আলাপের পর দেখিয়ে সফেদ দেয়ালের শান্ত ফটোগ্রাফটিকে বললাম জিজ্ঞাসু অতিথিকে– ‘এই যে আমার ছোট ছেলে, যে নেই এখন, পাথরের টুকরোর মতন ডুবে গেছে আমাদের গ্রামের পুকুরে বছর-তিনেক আগে কাক-ডাকা গ্রীষ্মের দুপুরে।’ কী সহজে হয়ে গেল বলা, কাঁপলো না গলা এতটুকু, বুক চিরে বেরুলো না দীর্ঘশ্বাস, চোখ ছলছল করলো না এবং নিজের কন্ঠস্বর শুনে নিজেই চমকে উঠি, কি নিস্পৃহ, কেমন শীতল। তিনটি বছর মাত্র তিনটি বছর কত উর্ণাজাল বুনে কেটেছে, অথচ এরই মধ্যে বাজখাঁই কেউ যেন আমার শোকের নদীটিকে কত দ্রুত রুক্ষ চর করে দিলো। অতিথি বিদায় নিলে আবার দাঁড়াই এসে ফটোগ্রাফটির প্রশ্নাকুল চোখে, ক্ষীয়মান শোকে। ফ্রেমের ভেতর থেকে আমার সন্তান চেয়ে থাকে নিষ্পলক,তার চোখে নেই রাগ কিংবা অভিমান।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভালবাসার কবিতা

নষ্ট হবে

এত হাসি কোথায় পেলে